অমল কৃষ্ণ পালিত,যশোর প্রতিনিধিঃ যে মা দশমাস দশদিন সন্তানকে গর্ভে ধারণ করে, শত কষ্টের মাঝে সন্তান জন্মের প্রসব বেদনা সহ্য করে হাসিমুখে সন্তানকে লালন পালন করে। আর সেই সন্তান যখন মাকে মেরে ফেলে, এর চেয়ে কষ্টের আর আর কিছু কি থাকতে পারে?
এমন এক হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের দোগাছিয়া গ্রামে। নিজ মেয়ের বিরুদ্ধে নিজ মা কে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ঘটেছে ২৪শে ডিসেম্বর শনিবার দুপুরে, নিহতের নিজ বাড়িতে।খবর পেয়ে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য যশোর ২৫০শস্যা হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত মেয়ে পালাতক রয়েছে। ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে ও মেয়েকে রক্ষা করতে নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে নিহতের প্রেসার বেড়ে মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে।
জানা যায়,দোগাছিয়া গ্রামের অবসর প্রাপ্ত সেনা সদস্য শাহাজান আলীর স্ত্রী আকলিমা বেগম(৫৫) ও বাড়িতে থাকা তার তালাকপ্রাপ্ত মেয়ে রুমা খাতুন(২৭) শনিবার দুপুর আড়াইটার দিকে সাংসারিক কাজ নিয়ে ঝগড়া শুরু করে।ঝগড়ার এক পর্যায়ে মেয়ে রুমা খাতুন তার মাকে জোরে ধাক্কা দিলে তিনি পাশে থাকা টিউবওয়েলের উপর পড়ে যান। গুরুত্বর আহত অবস্থায় প্রতিবেশিরা তাকে উদ্ধার করে পল্লী চিকিৎসক হয়রত আলীকে চিকিৎসার জন্য ডেকে আনেন। উপস্থিত প্রতিবেশিদের ভাষ্যমতে পল্লী চিকিৎসক আসার আগেই আকলিমা বেগম মারা যান। ঘটনার পরপরই রুমা খাতুন পালিয়ে যাই বলে জানা গেছে।
খবরটি মুহুর্তেই এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে ঘটনাস্থলে হাজির হয় সাজিয়ালী ফাঁড়ি পুলিশ।তারা লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য যশোর ২৫০শস্যা হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে। সাজিয়ালী ফাঁড়ি পুলিশের এস আই সেলিম হোসেন জানান,যেহেতেু মৃত্যুটি নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য পাওয়া গেছে এবং ঘটনার পরপরই মেয়ে পালাতক রয়েছে সেহেতু লাশটি ময়নাদতন্তের জন্য যশোর ২৫০শস্যা হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছি।ময়নাদতন্তের রির্পোট পেলে বুঝা যাবে এটি হত্যা নাকি প্রেসার জনিত মৃত্যু।তিনি আরো জানান,পুলিশ ইতিমধ্যে তদন্ত শুরু করেছে।
নিহত আকলিমার স্বামী শাহাজান আলী জানান,ঘটনার সময় তিনি বাড়িতে ছিলেন না।মাঠে গরু খাওয়াতে গিয়েছিলেন।পরে ছেলের কাছ থেকে শুনতে পারেন তার স্ত্রী প্রেসার বেড়ে পড়ে মৃত্যু বরণ করেছেন।মা মেয়ের ঝগড়ার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন। মেয়ের হাতে মা মারা গেছে এমন সংবাদ এলাকায় জানাজানি হয়ে পড়লে নিহতের বাড়িতে শতশত লোক ভিড় জমায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যক্তি মেয়েই মাকে হত্যা করেছে বলে সাংবাদিকদের নিকট জানিয়েছেন।
চুড়ামনকাটি ইউপি চেয়ারম্যান দাউদ হোসেন বলেন,মেয়েই মাকে হত্যা করেছে এটা এলাকবাসীর নিকট থেকে তিনি শুনেছেন। ঘটনার পরপরই মেয়ে পালাতক থাকায় সত্য ঘটনা ধামাচাপা রয়েছে।সে আটক হলে সত্য ঘটনা জানা যাবে। এদিকে,মেয়েকে বাঁচাতে ঘটনাটি ভিন্নখাতে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে নিহতের পরিবারের স্বজনরা।তারা পুলিশের নিকট দাবি করছে প্রেসার বেড়ে আকলিমা বেগম মারা গেছে।
এলাকাবাসীর দাবি আকলিমার মেয়ে রুমা খাতুন ঘটনার পরপরই পালিয়ে গেছে।তাকে আটক করে জিজ্ঞাসা করলে আসল রহস্য বেরিয়ে আসবে। ঘটনার পর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কয়েকটি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।